আপনি কোভিড ভ্যাক্সিন নিয়েছেন?
ভ্যাক্সিন নেয়ার সময়ে তোলা সেলফি (vaxxie) সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বন্ধুদের বিদ্রুপের শিকার হয়েছেন?
যা-ই ঘটুক না কেন, যদি আপনি vaxxie পোস্ট করে থাকেন, তবে আপনাকে অভিনন্দন!
করোনার এই অতিমারীকালে আশার আলো হয়ে এসেছে ভ্যাক্সিন।
কার্যকারিতা সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত না হওয়া গেলেও এ পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে আশাবাদী হচ্ছেন বিশ্ববাসী। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি ও অবদানে একদিন বিশ্ব করোনামুক্ত হবে এমনটিই এ মুহূর্তের বড় চাওয়া।
রাষ্ট্রগুলোও শতভাগ নাগরিককে ভ্যাক্সিনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের মতো সো-কল্ড তৃতীয় বিশ্বে গণটীকার কার্যক্রমে মানুষের ভীড় দেখলেই বোঝা যায় – টিকা নিতে মানুষ কতোটা আগ্রহী।
অবশ্য মূদ্রার আরেক পিঠে অন্য চিত্রও আছে।
পৃথিবীর সবাই যে টিকা নিতে খুব আগ্রহী তা কিন্তু না।
অ্যান্টি-ভ্যাক্সিন বা টিকা-বিরোধী দলও অনেক শক্তিশালী। এদের কার্যক্রম করোনা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান।
এর পেছনে একদিকে যেমন অজ্ঞতা আছে, তেমনি আছে সামাজিক কৌষ্ঠকাঠিন্য এবং ধর্মীয় (অপ)ব্যাখ্যা। করোনা ভাইরাস বিরোধী ভ্যাক্সিন নিলে শরীরের ভেতরে ক্যামেরা ঢুকে যাবে, এবং ইজরায়েল ২৪/৭ সব পর্যবেক্ষণ করবে; এসব বয়ান একদিকে যেমনি প্রচুর হাসির খোরাক জুগিয়েছে, অন্যদিকে প্রচুর ‘সরলমনা’দের বিভ্রান্ত করেছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সামগ্রিক টীকা কার্যক্রম ঐতিহাসিকভাবে সফল এক কার্যক্রম। “আপনার শিশুকে টিকা দিন” ক্যাম্পেইনের মতো দীর্ঘমেয়াদী সফল ক্যাম্পেইন ধারে কাছে কি না সন্দেহ। ফলে, টিকার ব্যাপারে জনসাধারণের মনে একটি ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে কোভিড ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রেও।
অন্যদিকে বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানে টিকা কার্যক্রমের অপরাধে মা-মেয়েকে কিংবা স্বাস্থ্য কর্মীকে গুলি করে মেরে ফেলার ঘটনা এখনো তরতাজা।
কোভিড ভ্যাক্সিনের কারণে কাউকে গুলি করে মারার ঘটনা না ঘটলেও টিকা-বিরোধীরা অনলাইনে অফলাইনে সংঘবদ্ধ হচ্ছে - এ অনেক পুরনো খবর।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে টিকা-বিরোধীদের সংখ্যা বাড়ছে কয়েক গুণ। টিকা না নেয়ার ব্যাপারে এরকম ঘাঁড় ত্যাড়ামি এবং সংঘবদ্ধতা চিন্তায় ফেলেছে বিশ্বের অনেক দেশের নীতি নির্ধারকদের। টিকা গ্রহণের সামাজিক এবং ধর্মীয় দিক নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গবেষণাপত্র।
টিকা-বিরোধী আন্দোলন কী পর্যায়ে পৌঁছেছে তা জানতে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এ লেখাটি পড়তে পারেন। এ দলের লোকজন কেবল নিজেরা টিকা নেবে না এমন অবস্থানেই থেমে নেই। যারা ভ্যাক্সিন নিচ্ছে, তাদেরকে বিদ্রুপ করে নানান রকম ট্রল করছে সচেতনভাবে।
টিকা-বিরোধীদের জন্য এসেছে নিজস্ব ডেটিং অ্যাপ UNJECTED.
বারবার নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও অ্যাপটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে হু হু করে।
ফলে সামগ্রিকভাবে, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে যখন টিকা-বিরোধী (অপ)প্রচার এবং প্রচারণা জোরদার হচ্ছে, এর মধ্যে আপনি টিকা নিয়েছেন এবং সেলফি তুলে তা প্রকাশ করেছেন।
দুষ্টু বন্ধুদের বিদ্রুপকে তুচ্ছ করে আপনি বিশাল এক ভূমিকা পালন করেছেন।
আপনার দেয়া সেলফি অন্যদের টিকা গ্রহণে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করেছে।
আপনি দেখিয়ে দিয়েছেন কোভিড ভ্যাক্সিনে ভয়ের কিছু নেই,
ভ্যাক্সিন নিলে মাথায় শিং গজায় না,
ভ্যাক্সিন নিলে আপনার জেন্ডার চেইঞ্জ হয়ে যায় না,
কিংবা ফার্টিলিটি উধাও হয়ে যায় না।
হয়তো আপনার সেলফির দৃশ্যমান গুরুত্ব বা অবদান আপনার চোখে ধরা পড়ছে না।
কিন্তু, আপনার সেলফি দেখে অন্য অনেকে সেলফি দিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে টিকা গ্রহণে আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছেন।
পার্সোনাল লেভেলের এই পরামর্শ বা ওয়ার্ড-অব-মাউথের শক্তি কোম্পানির বিজ্ঞাপন কিংবা সরকারের প্রচারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।
আপনি এবং আপনার মতো অনেকে যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভ্যাক্সি পোস্ট না করতেন তবে খুব সম্ভাবনা ছিল নিউজ ফিড দখল করে নিতো অপপ্রচারের কীট পতঙ্গেরা। সে অপপ্রচারে চাঁদে দেখা যেতো "তুরষ্কের ফাইজার ছেলেটিকে" কিংবা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট গোঁফেল চেহারা এবং মেয়েলি কন্ঠে বলছে "আমি জানি, কিন্তু বলবো না"।
আপনার ভ্যাক্সি সেলফি হয়েছে সেই অসংখ্য প্রজাপতির একটির মতো যাদের ডানার ঝাপটানিতে দূরে কোথাও সাইক্লোন নেমেছিল।
ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেবে - ২১ শতকের এই অতিমারীকালে সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে আপনার ভ্যাক্সি ক্ষুদ্র কিন্তু শক্তিশালী এক ভূমিকা রেখেছিল।
তাই, আপনি যদি vaxxie পোস্ট করে থাকেন, তবে আপনাকে অভিনন্দন!
No comments:
Post a Comment