সম্মানসূচক ডিগ্রি: শিক্ষা, বাণিজ্য, বাস্তবতা

 


        বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান।

ছাত্রছাত্রীদের জীবনে আকাঙ্ক্ষিত এবং স্মরণীয় একটি দিন। একটানা ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, পরীক্ষার আগে নির্ঘুম রাত, টিউশন ফি’র চাপ, স্কলারশীপের দৌড়; এরকম কতো কতো হাঙ্গামা পেরিয়ে ডিগ্রি অর্জনের দিনটির সামনে আসে তারা। বিশেষ করে, ডক্টরেট (পিএইচডি) ডিগ্রিধারীদের কাছে দিনটি যেন এক সমুদ্র সাতাঁর দিয়ে তীরে পৌঁছার ক্ষণ। উল্লেখ্য, পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করতে গড়ে চার থেকে পাঁচ বছর, কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে আট বছরও লাগে।  

ভেবে দেখুন, এতো বছরের ঘাম পরিশ্রমের ফলাফল হিসেবে খুব অল্প সংখ্যক মেধাবী কিছু ছাত্রছাত্রী যখন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ডক্টরেট সনদ গ্রহণের জন্য মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন তাদের সঙ্গে একই সনদ গ্রহণ করছে এমন কিছু লোক যারা ডক্টরেট ডিগ্রিটি অর্জনের জন্য বিন্দুমাত্রও পড়ালেখা করেনি। পরীক্ষায় বসেনি। কোনো ক্লাস কিংবা গবেষণাও করেনি। এরপরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক আদর যত্ন করে ডেকে সম্মানের সঙ্গে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে ডক্টরেট ডিগ্রি। হ্যাঁ, এই বিশেষ সম্মানের কারণে ডিগ্রিটির সত্যিকারের নাম – সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি।

 

ম্মানসূচক ডিগ্রীর ইতিহাস

শুরুটা হয়েছিল ১৪৭৮ সালে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে

সে সময় ইংল্যান্ডে লিওনেল উডভিল নামের এক তরুণ বিশপ ছিলেন। তিনি কেবল চার্চের প্রধানই ছিলেন না, জ্ঞান এবং প্রজ্ঞায় ছিলেন অনেক উঁচু মানের। সম্পর্কে তিনি রাজা চতুর্থ এডওয়ার্ডের ভগ্নিপতি ছিলেন। অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ ভাবলো এমন লোকের সাথেই সুসম্পর্ক করা যায়। কেবল সম্মান জানানো নয়, উডভিলের প্রভাব প্রতিপত্তির সুবিধা নেয়ার ভবিষ্যৎ উদ্দেশ্যও ছিল এর পেছনে। অক্সফোর্ডের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সকল কড়া নিয়মকানুনের বাইরে গিয়ে বিশেষ আয়োজনে উডভিলকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেয়া হলো। এর কিছুদিন পরেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পদে আসীন হন তিনি।

হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসূচক ডিগ্রির সূচনা আরও পরে। ১৬৯২ সালে ইনক্রিজ ম্যাথের নামক এক ক্ষমতাবান মন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছিল। নিয়োগের ঠিক আগেরদিন ম্যাথেরকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়া হয়। অথচ এই একই ডিগ্রির জন্য অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের কমপক্ষে পাঁচ বছর পড়ালেখা ও গবেষণা করতে হয়েছে।

 

 কারা পায়, কেন পায়?

তালিকা অনেক লম্বা।

খেলোয়াড়, শিল্পী, ব্যবসায়ী, লেখক, নেতা কিংবা অভিনেতা কে নেই? বিশ্বখ্যাত লেখক মার্ক টোয়েন, মুষ্ঠিযোদ্ধা মাইক টাইসন, টক শো উপস্থাপিকা অপরা উইনফ্রে, পপ শিল্পী বব ডিলান, কেইলি মিনোগ, মাইক্রোসফটের বিল গেটস, প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, রবার্ট মুগাবে, ক্রিকেটার শের্ণ ওয়ার্ণ এরকম অনেকেই বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন।   

কেন দেয়া হয় এসব সম্মানসূচক ডিগ্রি? এ প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে বলে, “স্ব-স্বক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে”।

অথচ, পর্দার ওপাশের গল্প অন্যরকম। তথ্য উপাত্ত ঘাঁটলে দেখা যায়, গত ৫৩৮ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এসব সম্মানসূচক ডিগ্রির বিনিমিয়ে মূলত বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যবসায়ী, জনপ্রিয় তারকা, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে আসছে। বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে আসছে বিশাল অংকের অনুদান ও স্বল্প খরচে বড়রকম প্রচারণা।

 

কার কী লাভ?

বছর দশেক আগে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স কলেজের প্রেসিডেন্ট আর্থার লেভিন স্বীকার করেন যে সম্মানসূচক ডিগ্রির পেছনে মূলত দুটি বিষয় জড়িত: অর্থ ও প্রচারণা।

শোবিজের জনপ্রিয় তারকা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আসেন, তখন সেটা বিভিন্ন মিডিয়ায় আলোচিত হয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নামকরা কেউ আগ্রহউদ্দীপক বক্তৃতা দিবেন– এমনটিই সবাই আশা করে শোবিজ তারকা বিল কসবির কথাই ধরা যাক। কঠোর পড়ালেখা করে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছিলেন তিনি। এরপরেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শতাধিক সম্মানসূচক ডিগ্রি নিয়েছেন। শোনা যায়, সম্মানসূচক ডিগ্রি নেয়ার পাশাপাশি সমাবর্তন বক্তা হওয়ার ব্যাপারটি খুবই উপভোগ করেন তিনি। বিল কসবিকে অতিথি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রচারণা পায়। অল্প খরচে বড়সড় প্রচার প্রসারও ঘটে। ঠিক যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারা! 


         কেবল জনপ্রিয় মানুষদের নয়, ফিকশনাল অ্যানিমেটেড চরিত্রকেও সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়ার ইতিহাস আছে। ১৯ মে ১৯৯৬ সালে একটি ব্যাঙকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয় নিউইয়র্কের সাউথহ্যাম্পটন কলেজ। কারমিট দ্য ফ্রগ নামের ব্যাঙটি জীবন্ত প্রাণী নয়। এটি একটি ফিকশনাল চরিত্র। ১৯৫৫ সালে থেকে সিসিম স্ট্রীট, দ্য মাপেট শো-সহ বিভিন্ন সিনেমায় কারমিট অভিনয় করে আসছে। বিশেষ করে জনস্বার্থে প্রচারিত বিভিন্ন পাবলিক সার্ভিস এনাউন্সমেন্টে কারমিটের ভূমিকা ব্যাপক প্রশংসিত হয়। সম্মানসূচক ডিগ্রি গ্রহণ করে কারমিট দ্য ফ্রগ একটি বক্তৃতাও দেয়। বক্তৃতাটি সে সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত হয়।

অন্যদিকে যেসব ধনীরা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক অর্থকড়ি দান করে আসছেন, সম্মানসূচক ডিগ্রীর মাধ্যমে তাদেরকেও স্বীকৃতি দেয়া হয়। আবার নতুন নতুন দাতাদেরও এসব ডিগ্রী প্রদানের মাধ্যমে আকৃষ্ট করা হয়।

প্রশ্ন জাগে, সম্মানসূচক ডিগ্রিপ্রাপ্তরা কী পরিমাণ অর্থকড়ি দান করেন?

সাংবাদিক টিম জনসনের মতে, ২০০২-২০১২ সাল সময়ে আমেরিকার ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয় মোট ৬০ জনকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দিয়েছিল। পরবর্তীতে এই ৬০ জনের মধ্যে ৩৫ জন বিভিন্ন সময়ে ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার দান করেছিলেনএছাড়াও বিশেষ একজন একাই দিয়েছিলেন ৯ মিলিয়ন ডলার!

 


 

সুতরাং, অর্থের বিনিময়ে সম্মানসূচক ডিগ্রি পাওয়ার ব্যাপারটিতে লুকোছাপার কিছু আর নেই। ১৯৯৮ সালে জর্জিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ মিলিয়ন ডলার দান করেছিলেন ব্যবসায়ী ম্যাক রবিনসন। এর পরপরই ‘ব্যবসাখাতে বিশেষ অবদানের জন্য’ রবিনসনকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। এখানেই শেষ নয়। সে বছরই বিশ্ববিদ্যালয়টির বিজনেস কলেজের নাম বদলে ‘জে ম্যাক রবিনসন কলেজ অভ বিজনেস’ করা হয়।

 

বিতর্ক ও সমালোচনা

বর্তমানে সম্মানসূচক ডিগ্রির বাজার রমরমা।

গত তিনশ বছরে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় ২৮০৫ জনকে, পেনসিলভিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১৭২২ জনকে, ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় ২০৩০ জনকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দিয়েছে। হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন যাবৎ বছরে ২/১ জনকেই সম্মানসূচক ডিগ্রি দিতো। তবে, ২০০৬ সালের পর অবস্থা পাল্টেছে। এখন বছরে গড়ে ৯/১০ জনকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেয় হারভার্ড।

এমন অনেকে আছেন, যারা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। যেমন, নেলসন ম্যান্ডেলা পেয়েছেন ৬ বার। আমেরিকার অধিকাংশ রাষ্ট্রপতির পকেটে কমপক্ষে ১০টি সম্মানসূচক ডিগ্রি আছে। জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ একাই পেয়েছেন ৩২ টি। সিনেটর এলিজাবেথ ডোলের ঝুলিতে আছে ৪০টি। সাত খন্ডের হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে কে রাউলিং পেয়েছেন ৭টি সম্মানসূচক ডিগ্রি। বিখ্যাত অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রীপ অস্কার পেয়েছেন ৩ বার, কিন্তু সম্মানসূচক ডিপ্লোমা পেয়েছেন ৪ বার। লেখিকা মায়া এঞ্জেলো সারা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫০টিরও বেশি সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। সফটওয়্যার ফ্রিডম অ্যাক্টিভিস্ট রিচার্ড স্টলম্যান পেয়েছেন ১৫টি। হারভার্ড, ইয়েলসহ মোট ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন আমেরিকার রাষ্ট্র জনক বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন।

শুরুর দিকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদানে প্রভাব-প্রতিপত্তির পাশাপাশি ব্যক্তিগত মেধা-প্রজ্ঞাকে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু, ক্রমান্বয়ে এসবের বাইরে জনপ্রিয়তাই প্রধান বিবেচ্য হয়ে উঠলো। শো-বিজের তারকা, নামকরা রাজনীতিবিদ, ধনী ব্যবসায়ীরা সম্মানসূচক ডিগ্রীর দৌড়ে প্রথম সারিতে চলে এলো। ডজন ডজন সম্মানসূচক ডিগ্রির মালিক হয়ে গেল একেক জন। এদের অনেকেই সনদ পেয়েই থেমে থাকেনি। বিভিন্ন আসরে, বক্তৃতায়, স্বাক্ষরে তারা নিজেদের ডক্টর অমুক বলে পরিচয় দেয়া শুরু করলো।

দিনে দিনে অর্থ ও প্রতাপের জোরে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়াদের ভীড় এতো বেড়ে গেল যে পড়ালেখা করে ডক্টরেট পাওয়াদের অনেকেই প্রতিবাদ করতে লাগলো। ১৮৮৯ সালে চার্লস ফস্টার স্মিথ, যিনি পড়ালেখা করেই ডক্টরেট পেয়েছিলেন, রাগে ক্ষোভে এই সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। তিনি হিসেব করে দেখান, মাত্র দশ বছরে আমেরিকার আড়াইশ’ বিশ্ববিদ্যালয় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি সম্মানসূচক ডিগ্রি দিয়েছে।

এসব প্রতিবাদ, সমালোচনায় কোনো কাজ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্মানসূচক ডিগ্রির কারবার অব্যাহত রেখেছে। আমেরিকার কলরাডো কলেজের মতো অনেক প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে পিএইচডি ডিগ্রি  নেই। অথচ, ঠিকই তারা সম্মানসূচক পিএইচডি দিয়ে যাচ্ছে!

অনেক অর্থকড়ির মালিক, নামীদামী লোকজন নিজেরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি লিখে সম্মানসূচক ডিগ্রির আবেদন করেছে। যারা যারা চিঠির সাথে বড়সড় অনুদান দিয়েছে, তারা সাড়াও পেয়েছে দ্রুত।

তর্ক-বিতর্ক আর সমালোচনার আগুন কমাতে পরবর্তীতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে যে, এ ডিগ্রি কেবলই ‘সম্মানের খাতিরে’ দেয়া হচ্ছে। ডিগ্রীপ্রাপ্তদের নামের আগে ডক্টর লিখতেও অনুৎসাহিত করা হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ওয়েবসাইটেও এ তথ্য জানিয়ে রেখেছে।

 

 বুও ব্যতিক্রম

আমেরিকার কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্ণিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান কোনো রকম সম্মানসূচক ডিগ্রী দেয় না। আরেক শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমআইটি’র প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম রজার্স বলেন, “এসব সম্মানসূচক ডিগ্রী সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য শিক্ষার অবমূল্যায়ন ছাড়া আর কিছু নয়”। ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা থমাস জেফারসন শুরু থেকেই তার বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসূচক ডিগ্রির চর্চা বন্ধ রেখেছিলেন। তার মতে, “ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব ডিগ্রি দেয়া হয়, মেধার কোনো ভূমিকা এখানে নেই”

খ্যাতি, প্রচার-প্রসার ও সম্মান পাওয়ার দৌড়ে নির্মোহ লোকের সংখ্যা খুবই কম। বিশেষ করে সম্মানসূচক ডিগ্রির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার রেকর্ড হাতে গোণা। দার্শনিক জর্জ বার্ণাড শ’ তেমনই ব্যতিক্রম। ইংল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় যখন তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ইন ল ডিগ্রির প্রস্তাব দেয়, তিনি রাগে ক্ষোভে চিঠি লিখে জানান, “যে বিষয়ে আমার কোনো অবদান নেই, সে বিষয়ে আমাকে ডিগ্রি দেয়ার সাহস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোথায় পায়? এটা কেবল আমার অপমানই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও লজ্জাজনক। আমি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছি।”

বার্ণাড শ’র মতো ক্ষোভ প্রকাশ না করলেও নম্রতা ও বিনয়ের সঙ্গে সম্মানসূচক ডিগ্রির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জার্মান-আমেরিকান সাংবাদিক ও সাহিত্যিক এইচ এল ম্যানকেন। কিন্তু প্রায় ২০-২৫ বার এরকম প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে, তীব্র বিরক্তি নিয়ে, তিনি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলেন, “এসব সম্মানসূচক ডিগ্রি মূলত কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট, রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এবং অন্যান্য খ্যাতিলোভী মানুষদের জন্য। কোনো ভদ্র-সজ্জন মানুষ এসব মুফতে পাওয়া ডিগ্রি গ্রহণ করতে পারে না।”

এরপর আর কেউ কোনোদিন ম্যানকেনকে সম্মানসূচক ডিগ্রির প্রস্তাব দেয়ার সাহস পায়নি।

 

***

[লেখাটি ২০১৬ সালের জুলাই মাসে রহস্যপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল]

***

তথ্য সূত্রঃ

1.      http://www.gradschoolhub.com/faqs/what-is-the-average-time-to-obtain-a-ph-d/

2.      http://priceonomics.com/why-do-colleges-give-out-honorary-degrees/

3.      http://www.harvard.edu/on-campus/commencement/honorary-degrees

4.      http://theconversation.com/honorary-doctorates-well-deserved-or-just-a-bit-of-spin-4267

5.      http://www.theguardian.com/education/mortarboard/2010/jul/14/why-do-celebrities-get-honorary-degrees

6.      http://study.com/articles/What_are_Honorary_Doctorate_Degrees.html

7.      http://www.telegraph.co.uk/men/thinking-man/11599831/What-exactly-is-the-point-in-giving-celebrities-honorary-degrees.html

8.      http://www.ox.ac.uk/news-and-events/The-University-Year/Encaenia/Honorary-Degrees-Early-History

9.      http://www.ox.ac.uk/news-and-events/The-University-Year/Encaenia/Honorary-Degrees-Early-History

10.  http://scdb.swem.wm.edu/wiki/index.php/Honorary_degree_recipients

11.  http://secretary.yale.edu/programs-services/honorary-degrees/since-1702?field_degrees_value=All&field_year_value=All&keys=&page=56

12.  http://www.harvard.edu/on-campus/commencement/honorary-degrees

13.  https://newrepublic.com/article/117947/maya-angelou-was-ms-not-dr-against-title-inflation-america

14.  http://robinson.gsu.edu/alumni-giving/alumni/notable-alumni/

15.  http://www2.southampton.liu.edu/news/commence/1996/kermit.htm

16.  http://news.mit.edu/2001/commdegrees

17.  http://stateofmyignorance.blogspot.com.au/2013/04/honorary-degrees-neither-honorary-nor.html

18.  http://www.csmonitor.com/1992/0518/18192.html

 


No comments:

Post a Comment