এ সময়ে আলোচিত ঘটনার অন্যতম হচ্ছে চলচ্চিত্রের নায়িকা পরীমনির গ্রেপ্তার।
এর আগে এবং পরে ঘটনার ঘনঘটা এবং আগামীতে এর ঘটনা পরম্পরা নিশ্চয় চলবে।
পরীমনির সেলিব্রিটি ইমেজ কিংবা স্ক্যান্ডালের বিশ্লেষণ এ লেখার উদ্দেশ্য নয়।
বরং মার্কেটিংয়ের দৃষ্টিকোণে পরীমনির এসব ঘটনার প্রভাব ব্র্যান্ড এবং বিজ্ঞাপনে কেমন পড়বে সে নিয়ে কিছু “কুইক নোটস”।
২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত ফোর্বস ম্যাগাজিনের Asia’s 100 Digital Stars প্রতিবেদনে এশিয়ার ১০০ ডিজিটাল তারকার তালিকায় পরীমনি জায়গা করে নিয়েছেন।
সে সময় ফেসবুকে প্রায় ১ কোটি অনুসারী ছিল তার।
মাঝে মাঝে সিনেমা এবং অধিকাংশ সময় সিনেমা-বহির্ভূত বিষয়ের কারণে পরীমনি সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। তারকা খ্যাতির ঔজ্জ্বল্যের মাঝে সাম্প্রতিক বোটক্লাব কান্ড এবং গ্রেফতারের পরে খুব স্বাভাবিক নিয়মে তিনি ইমেজ সংকটে পড়েছেন। এ সংকট কতোটা তীব্র এবং দীর্ঘায়িত হবে তার উত্তর পেতে সময় লাগবে। তবে এরকম সেলিব্রিটি স্ক্যান্ডালে খুব দ্রুত কম-বেশি সংকটে পড়ে যায় সেলিব্রিটির স্পন্সর করা ব্র্যান্ডগুলো। ক্ষেত্র বিশেষে ব্র্যান্ডগুলো নিজের অবস্থানও ঘোষণা করে।
প্রশ্ন হচ্ছে – পরীমনির কারণে কি সংকটে পড়বে কোনো ব্র্যান্ড?
বিজ্ঞামনের ফলোয়ারদের একটা অংশকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল
বাংলাদেশের নায়িকা পরীমনির করা কোনো বিজ্ঞাপন কি আপনার মনে পড়ছে?
যদি মনে পড়ে থাকে, তবে কোন ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন মনে পড়ছে?
১২ ঘন্টার কম সময়ের মধ্যে ১৩০ জন এ জরিপে অংশ নিয়েছেন। এর মাঝে ৭০ জন বলেছেন তারা পরীমনির করা কোনো বিজ্ঞাপন মনে করতে পারছেন না। ১৬ জন বলেছেন, তারা বিজ্ঞাপন দেখেছেন কিন্তু কোন ব্র্যান্ডের সেটা স্মরণ করতে পারছেন না। বাকী ৪৪ জন পরীমনির করা বিজ্ঞাপন স্মরণ করতে পেরেছেন।
এ ৪৪ জনের উল্লেখ করা ব্র্যান্ডের মাঝে সবচে’ বেশি এসেছে স্যান্ডালিনা সোপের নাম। পরীমনি কখনো লাক্সের, জুঁইয়ের কিংবা রাঁধুনি মসলার বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছেন কীনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও এ জরিপে এ তিন ব্র্যান্ডের নাম উঠে এসেছে। অবশ্য কোলাহলময় বিজ্ঞাপন সমাজের বাসিন্দাদের স্মৃতিভ্রম এবং বিভ্রান্তি খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়।
বাকী সাতটি ব্র্যান্ডে মাঝে কেবল স্যান্ডালিনা সাবানের জন্য একাধিক বিজ্ঞাপনে নিয়মিতভাবে পরীমনির উপস্থিতি দেখা গেছে। যদিও এই ‘একাধিক’ বিজ্ঞাপন বক্তব্যে বা বৈশিষ্ট্যে আলাদা কিছু মনে হবে না।
স্যান্ডালিনার বিজ্ঞাপনে এক সময় মডেল হয়েছেন জয়া আহসান।
পরবর্তীতে ব্র্যান্ডটির প্রচারে প্রসারে পরীমনির উপস্থিতি দেখা গেলেও বিজ্ঞাপনের ধরণে কোনো পার্থক্য চোখে পড়েনি। স্রেফ মনে হয়েছে মানুষের ছবি পালটে একই কন্টেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
একই প্রবণতা দেখা গেছে স্যান্ডালিনার টিভি বিজ্ঞাপনেও
কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানী বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষ থেকে স্যান্ডালিনার ব্র্যান্ড বিল্ডিংয়ে সেলিব্রিটি কেন্দ্রীক কোনো ধারাবাহিক দৃশ্যমান কাজকর্ম চোখে পড়েনি। একই রকম বিজ্ঞাপন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে/হচ্ছে বছরের পর বছর।
বিশ্বজুড়ে তারকাদের সৌন্দর্য্য সাবান ঘোষণা দিয়েও বাংলাদেশে লাক্স এক রকম গণমানুষের সাবান হয়ে উঠেছে। বিপরীতে স্যান্ডালিনার অবস্থান বেশ ঘোলাটে। বিজ্ঞাপনে কিছু প্রিমিয়াম ইংগিত থাকলেও এর বাজার, বিপনন এবং ভোক্তা সমাজের কাঠামো বেশ অস্পষ্ট।
ফলে, পরীমনির চলতি সংকটে স্যান্ডালিনা কোনো রকম আক্রান্ত হবে কি না কিংবা কোনো ঘোষণা দেবে কি না তা-ও পরিস্কার নয়। আগামীকাল সকালে পরীমনির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার বা চালু রাখার ঘোষণা দিলে – ব্র্যান্ডের অবস্থানে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। এর অন্যতম কারণ, সম্ভবতঃ স্যান্ডালিনার অবস্থান তৈরিতে পরীমনির ভূমিকা খুব নগণ্য। স্যান্ডালিনার ভোক্তারা কতোটা সংশ্লিষ্ট সেলিব্রিটি দ্বারা প্রভাবিত সেটা নিয়ে আলাদা গবেষণা হতে পারে।
অন্য সাতটি ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেও প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ খুব আলাদা হবে বলে মনে হয় না।
এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি জিজ্ঞাসা – প্রায় এক কোটি অনুসারীর এ সেলিব্রিটিকে টেলিকম, ব্যাংক, কোমল পানীয় বা অন্য কোনো খাত কেন তাদের প্রধান ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করলো না?
একটা কারণ হতে পারে – সংশ্লিষ্ট থিংকট্যাঙ্করা পরীমনিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেছেন, যে শংকা তাদের মনে ছিল সেটা হয়তো এখন প্রমাণিত হয়েছে।
নাকি অন্য কোনো কারণ ছিল?
যা-ই হোক না কেন, পরীমনি কেন কোনো ব্র্যান্ডের (স্যান্ডালিনা ছাড়া) প্রধান মুখ হতে পারলেন না, দীর্ঘ মেয়াদে কোনো ব্র্যান্ডের নির্মাণে অংশ নিতে পারলেন না; সে এক গভীর বিশ্লেষণের বিষয়।
তবে, অন্য ব্র্যান্ডের জন্য লিডিং সেলিব্রিটি না হলেও, পরীমনি নিজেই একটি ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছেন। এটা স্রেফ তার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং। তার গ্রেপ্তার পূর্ববর্তী মুহূর্তের ফেসবুক লাইভ ৩০ মিলিয়নের বেশি মানুষ দেখেছেন, বাড়ির সামনে ভীড় করেছেন হাজার হাজার মানুষ। এসবই তার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের প্রতিচ্ছবি।
পরীমনি হয়তো আইনগত প্রক্রিয়াতেই মুক্ত জীবনে আসবেন একদিন।
তখন তিনি তার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংকে কীভাবে পুনঃনির্মাণ করেন সেটি দেখার বিষয়।
No comments:
Post a Comment