- কুইক নোট -
পয়েন্ট অব প্যারিটি (Point of Parity) এবং পয়েন্ট অব ডিফারেন্স (Point of Difference) মূলতঃ ব্র্যান্ড পজিশনিং স্ট্র্যাটেজির উল্লেখযোগ্য দু’টি অংশ।
ব্র্যান্ড পজিশনিং-এর ক্ষেত্রে একটি প্রাথমিক জিজ্ঞাসা হলো – ভোক্তারা আমার ব্র্যান্ড নিয়ে কী জানে (নলেজ স্ট্রাকচার)? এর উত্তর নির্ধারণ করা হয় সুনির্দিষ্ট দু’টি প্রশ্নের ভিত্তিতে -
১) আমার ব্র্যান্ডের সাথে অন্য ব্র্যান্ডের মিল কী? (পয়েন্ট অব প্যারিটি)
২) আমার ব্র্যান্ড অন্য ব্র্যান্ড থেকে কীভাবে আলাদা? (পয়েন্ট অব ডিফারেন্স)
আইফোন এবং স্যামসাং স্মার্টফোনের কথা ধরা যাক –
দুটো ব্র্যান্ডের মাঝে কিছু বিষয়গত মিল আছে – দু’টোতেই ইন্টারনেট ইউজ করা যায়, ছবি তোলা যায়, ফোরজি আছে। এগুলো হলো কমন অ্যাট্রিবিউট। এই অ্যাট্রিবিউটগুলো কোনো ব্র্যান্ডের জন্য স্বতন্ত্র (ইউনিক) নয়। বরং বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এই অ্যাট্রিবিউটগুলো রাখতেই হবে।
অন্যদিকে, পয়েন্ট অব ডিফারেন্স হলো – একটি ব্র্যান্ডের ইউনিক কোনো অ্যাট্রিবিউট। যেমন আইফোনে ফেস-টাইম আছে, এটা অন্য ব্র্যান্ডের নেই। স্যামসাং-এর এস-হেলথ আছে, যেটা কেবল স্যামসাং-এ পাওয়া যায়। এই পয়েন্ট অব ডিফারেন্স একটা ব্র্যান্ডকে ইউনিক পজিশনিং এবং ইউনিক সেলিং প্রপোজিশন (ইউ এস পি) সৃষ্টিতে সাহায্য করে। সহজ ভাষায়, পয়েন্ট অব ডিফারেন্স হলো – আমার ব্র্যান্ড অন্যদের চেয়ে কীভাবে আলাদা?
*
আইফোন স্যামসাং ছাড়া অন্য প্রোডাক্ট ক্যাটেগরিতেও পয়েন্ট অব প্যারিটি এবং পয়েন্ট অব ডিফারেন্স আছে।
মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স এবং এয়ার এশিয়ার কথা ধরি।
দুটো ব্র্যান্ডই প্যাসেঞ্জার ক্যারি করে। তাদের পয়েন্ট অব প্যারিটি অনেক।
তবে পয়েন্ট অব ডিফারেন্স হলো – এয়ার এশিয়া বাজেট এয়ারলাইন্স, কিন্তু মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স হলো ফুল সার্ভিস ব্র্যান্ড।
*
টুথপেস্ট ব্র্যান্ডগুলোর দিকে তাকালে পয়েন্ট অব প্যারিটি দেখা যাবে – সব ব্র্যান্ড মূলতঃ দাঁত ও মুখের যত্নের কথা বলে। কিন্তু এর পরেও পয়েন্ট অব ডিফারেন্স সুস্পষ্ট –
যেমন – ক্লোজ আপ দেবে সজীব নিঃশ্বাস;
কলগেট দাঁতের মাড়ি শক্ত করবে;
সেনসোডাইন দাঁতের সেনসিটিভিটি বা শিরশিরে অনুভূতি থেকে রক্ষা করবে।
এসবই পয়েন্ট অব ডিফারেন্স।
পয়েন্ট অব ডিফারেন্স একটা ব্র্যান্ডকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।
পয়েন্ট অব প্যারিটির মূল লক্ষ্য হলো – “কিছু বিষয়ে অন্যরা যা দিচ্ছে, আমরাও তা দিচ্ছি”।
এই হলো সংক্ষেপে পয়েন্ট অব প্যারিটি/ডিফারেন্স।
*
শেষ দুটি কথা –
১) পয়েন্ট অব প্যারিটি না থাকলে কী হবে?
একেবারে নতুন, যেটা আগে এই দুনিয়ায় ছিল না, সেরকম প্রোডাক্ট আনলে – হয়তো দাবী করা যেতে পারে, এটাতে কোনো পয়েন্ট অব প্যারিটি নেই। অথচ, লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সব কিছুতে মোটামুটি একটা পয়েন্ট অব প্যারিটি আছে। এই যেমন মোবাইল ফোন যখন প্রথম এলো, তখন মানুষ জানতে চাইলো এটা কীসের মতো?
বলা হলো – এটা টেলিফোনই কিন্তু তার নেই।
আবার যখন স্মার্টফোন এলো বলা হলো এটা কম্পিউটারের মতো। সব কিছু এই মোবাইল ফোনে পাওয়া যাবে।
নতুন কোনো সফট ড্রিংকস বাজারে আনলে খুব সম্ভবত একটা পয়েন্ট অব প্যারিটি থাকবে যে এটা কোকা কোলার মতো, বা স্প্রাইটের মতো বা মাউন্টেন ডিউর মতো।
পয়েন্ট অব প্যারিটি একেবারে না থাকলে, কনজ্যুমাররা কনফিউজড হতে পারেন, এই জিনিসটা কী – খায় নাকি মাথায় দেয় – সেটা ব্যাখ্যা করতে (কনজ্যুমার নলেজ বিল্ড করতে) অনেক টাকা এবং সময় চলে যাবে।
তাই, আগে যেমন বলেছি, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য পয়েন্ট অব প্যারিটি প্রয়োজন।
২) পয়েন্ট অব ডিফারেন্স কতোদিন স্বতন্ত্র রাখা যাবে? অন্যরা একই অ্যাট্রিবিউট আনলে এই পয়েন্ট অব ডিফারেন্স কি থাকবে?
উত্তর – না, থাকবে না।
পয়েন্ট অব ডিফারেন্স এমন বিষয়ের ওপর হতে হবে, যেটা অন্যরা ‘সহজে’ কপি করতে পারবে না। বা কপি করতে গেলেও অনেক সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে মূল ব্র্যান্ডটি যথেষ্ট মার্কেট শেয়ার বা কম্পিটিটিভ অ্যাডভানটেজ পেয়ে যাবে।
এই নিয়ে বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে মামলা মোকদ্দমাও হয়।
অ্যাপলের ‘বাউন্স ব্যাক’ ইফেক্ট কপি করার অভিযোগে স্যামসাং-এর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এইজন্য পরামর্শ দেয়া হয় – টেকনিক্যাল কোনো ইনোভেশন আনলে সেটা প্যাটেন্ট/কপিরাইট করে রাখা ভালো, তাহলে আইনী লড়াইয়ে জেতা যাবে।
***
নোটঃ
বিজ্ঞামনের ফেসবুক পেজে এক পাঠক জিজ্ঞেস করেছিলেন POP/POD কী? কমেন্টে উপরের কথাগুলো লিখেছিলাম। যিনি প্রশ্ন করেছিলেন তিনি তার পোস্টটি মুছে দিলে, এই কমেন্টও হারিয়ে যায়। তবে, সৌভাগ্যক্রমে লেখাগুলো ডকে ড্রাফট করা ছিল। "কুইক নোট" সিরিজে লেখাটি বিজ্ঞামন ব্লগে তুলে রাখা হলো।
No comments:
Post a Comment