বিজ্ঞামনের বর্ষপূর্তি

বিজ্ঞামনের ১ বছর
**********************
আজ বিজ্ঞামনের ১ বছর পূর্ণ হলো।
বিজ্ঞামনের ফেসবুক পেজ এবং ব্লগ একই দিনে যাত্রা শুরু করেছিল।

বিজ্ঞামন নামের আলাদা প্ল্যাটফর্মের ভাবনা আসে ফেসবুকে “এই আমি সেই আমি বিজ্ঞাপনে কোন আমি” এবং “টর্চেস অব ফ্রিডম” নোটসের মাধ্যমে। এই দুটি পোস্ট একটা লিমিটেড সার্কেলের পাঠকদের নজর কাড়ে।

এর পরপর “বিজ্ঞাপনে নান্দনিকতা ও রুচিবোধ”, যদিও তাড়াহুড়া করে লেখা এবং বেশ অগোছালো, তবুও ব্র্যান্ড এবং বিজ্ঞাপন বিষয়ে আগ্রহীদের প্রশংসা পায়। এরকম আরও লেখা পাবলিকলি পোস্ট করার প্রস্তাব আসে।

পাঠকদের মনে থাকতে পারে – গত অক্টোবরে প্রিন্স বাজার “শারদীয়া বিফ অফার” দিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছিল। সে প্রেক্ষিতে “বিফ, ল্যাম্ব, নাইকি ও ব্যুফে” শিরোনামের লেখা আসে বিজ্ঞামনে। ফেসবুকে শতাধিকবার শেয়ার্ড হয় লেখাটি।

গত ১ বছর বিজ্ঞামনে ২০টির মতো লেখা এসেছে। লেখাগুলো মূলতঃ ৩ ধাঁচের
১) থিয়রী
২) কেইস স্টাডি
৩) সমকালীন ঘটনা

বিজ্ঞাপনে নস্টালজিয়া, ব্র্যান্ড ডিফারেনশিয়েশন, ব্র্যান্ড অ্যাডিকশন এবং বিজ্ঞাপনে অপরাধবোধ লেখাগুলো থিয়রী ভিত্তিক। এর মূল লক্ষ্য ব্র্যান্ড ও বিজ্ঞাপন কেন্দ্রীক থিয়রীগুলোকে সহজ আলোচনার মাধ্যমে উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা। সে লক্ষ্য কতোটা সফল হয়েছে – সেটা ভাবার বিষয়। কারণ, ইংরেজী থেকে বাংলায় ভাবান্তরের অনেক চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ‘বাংলিশ’ হয়ে থেকেছে। এই বাংলিশটা মাঝে মাঝে ইচ্ছাকৃত, মাঝে মাঝে বাধ্যগত, এবং কখনো কখনো কনফিউশন থেকে তৈরি। যেমন – ভোক্তা সন্তুষ্টির চেয়ে কাস্টমার স্যাটিসফ্যাকশনকেই মাঝে মাঝে বেশি যোগ্য মনে হয়েছে। থিয়রীভিত্তিক লেখাগুলো লিখতে যে পরিমাণ সময় শ্রম লাগে, সে অনুপাতে পাঠক প্রিয়তা পায়নি লেখাগুলো। যদিও ব্যান্ড লয়্যালটি মারা যাচ্ছে কীনা – লেখাটি একটু ব্যতিক্রম।

থিয়রীর তুলনায় কেইস স্টাডি লেখাগুলো পাঠক বেশি পড়েছেন। মুকব্যাং, কোকাকোলা, এয়ার এশিয়া, ট্রপিকানা নিয়ে লেখাগুলো পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। মুকব্যাং নিয়ে লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল জুনের ১ তারিখে। সে সময় গুগল সার্চ দিয়ে বাংলায় মুকব্যাং-য়ের সংজ্ঞা ছাড়া অন্য কোনো লেখা পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞামনে “মুকব্যাং – কোরিয়া থেকে কক্সবাজার” প্রকাশিত হওয়ার ২ দিন পরে, ৩ জুন ২০১৯-এ, বিবিসি বাংলা মুকব্যাং নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রথম আলো মুকব্যাং নিয়ে লেখা ছাপায় অগাস্টে। তথ্যগুলো উল্লেখের উদ্দেশ্য কোনো রকম “আমি সবার আগে” টাইপ ক্রেডিট নেয়া নয়, বরং বিজ্ঞামনের উদ্দেশ্যকে একটু পরিস্কার করা। মুকব্যাং জাতীয় পপুলার কালচারাল বিষয়গুলোতে বিজ্ঞামন চোখ রাখবে, এবং বাংলায় বিস্তারিত লেখা প্রকাশ করবে; এটাই লক্ষ্য।

তবে, সমকালীন ঘটনা নিয়ে লেখাগুলো সবচে বেশি পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। হয়তো এটাই এই সময়কার নেটিজেন সমাজের স্বরূপ। “বিফ, ল্যাম্ব, নাইকি, ও ব্যুফে” নিয়ে আগেই বলেছি। এরপর বিকাশের নাহিদ বিষয়ক ‘ইন্সপিরেশন’ নিয়ে বেশ হৈচৈ ছিল। বিজ্ঞামন সেই হৈচৈয়ে সরব থেকেছে বা গা ভাসিয়েছে বলা যায়। যেমনটি ঘটেছে – নগদ’এর বাবা-মেয়ে বিষয়ক বিজ্ঞাপনটি নিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায়, বিশেষ করে ফেসবুকে, যখন বিজ্ঞাপনটি নিয়ে তোলপাড় ঘটছে, তখন বিজ্ঞামনের লেখাটি ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ফেসবুক শেয়ারে হাজার ছাড়িয়ে যায়। প্রায় ১০ হাজারবার পড়া লেখাটি একদিকে যেমন তালি পায়, অন্যদিকে গালিও আসে। খুব সম্ভবতঃ সমালোচনাকে ‘পার্সোনালি’ নেয়া কিছু মানুষ এই প্রতিক্রিয়া দেখান। বিজ্ঞামন বা বিজ্ঞামন সংশ্লিষ্ট কারও সঙ্গে এই প্রতিক্রিয়া-জানানো-ব্রেইনদের বন্ধুত্ব নেই, শত্রুতাও নেই। আগামীতেও থাকার সম্ভাবনা নেই। বিজ্ঞামন নিজের কথা বলেছে; একমত হতে হবে সে দাবী কখনো বিজ্ঞামন করেনি। বিতর্কিত বিষয় উস্কে দিয়ে, আগুনে ঘি ঢেলে, চা ঢেলে – স্পটলাইটে আসার ইচ্ছা বিজ্ঞামনের নেই।

বিজ্ঞামনের পরিকল্পনা ছিল ১ম বছরে ২৫টি লেখা প্রকাশ করবে বিজ্ঞামন। সে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তবে ব্লগস্পটে প্রতিদিন কেউ না কেউ বিজ্ঞামনে লেখাগুলো পড়ছেন। পরিসংখ্যান বলছে – প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন পাঠক বিজ্ঞামন ব্লগ পড়ছেন।

এক বছর আগে বিজ্ঞামনের ফেসবুক পেজটিও চালু হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল – বিজ্ঞামন ব্লগের লেখাগুলো এই পেজের মাধ্যমে শেয়ার করা। সে লক্ষ্য ঠিক ছিল। তবে, পাশাপাশি বিভিন্ন ইন্টারেস্টিং বিজ্ঞাপন এবং সংবাদ লিংকও শেয়ার করেছে ফেসবুক পেজ। এরকম বিজ্ঞাপন শেয়ারিং-এ ফলোয়ারদের বেশ উৎসাহ ছিল। তবে, বিজ্ঞামন সতর্ক থেকেছে। স্রেফ বিজ্ঞাপন শেয়ারিং পেজ হতে বিজ্ঞামন চায় না। আনন্দের বিষয় হলো – ফেসবুকে একাধিক দূর্দান্ত পেজ আছে বিজ্ঞাপন বিষয়ক। সেসব পেজের লক্ষাধিক ফলোয়ার আছে, হাজার হাজার লাইক আছে; বিজ্ঞামন সাধুবাদ জানায় ফেসবুকের ওসব পেজকে। বিশেষ করে, ঐসব পেজের পেছনে যারা সময়-শ্রম-মেধা দেন, তাদের হ্যাটস অফ। লাইক শেয়ার দিয়ে সব কিছু মূল্যায়ন করা যায় না। তবে বিজ্ঞাপন বিষয়ক পেজগুলো নিঃসন্দেহে আগ্রহীদের ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে।

ফেসবুক পেজ বনাম ব্লগস্পট; এ দ্বৈরথে বিজ্ঞামন ব্লগস্পটের পক্ষে। বর্তমানে ফেসবুকে ১৩৬৯ লাইক আছে। বিজ্ঞামনের সক্রিয়তার বিচারে এই সংখ্যা নেহায়েতই কম নয়। তবে এই সংখ্যার পেছনে আছেন বিজ্ঞামনের শুভাকাঙ্ক্ষীরা, যাদের অনেকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ফেসবুকে বিজ্ঞামনের প্রচার-প্রসার করেছেন। ইনবক্সে নানান সময়ে পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। আলাদা ওয়েবপেজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন একাধিকজন। একজন চমৎকার লোগো বানিয়ে দিয়েছেন। আরেকজন শুভাকাঙ্ক্ষী প্রায় অর্ধলক্ষ ফলোয়ার সমৃদ্ধ একটি ফেসবুক পেজ বিজ্ঞামনের হাতে তুলে দিয়েছেন। কারিগরী দিক নিয়ে প্রায় পুরোটা সময় দু হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন একজন, অথচ তাঁর নিজস্ব ব্যস্ততার সীমা ছিল না। এসব কিছু সার্বিকভাবে বিজ্ঞামনকে উৎসাহ অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

বিজ্ঞামন জনবাহুল্য বা কোলাহল চায় না।
ব্র্যান্ড কনজ্যুমার ও বিজ্ঞাপন বিষয়ে বিজ্ঞামন জানতে চায়, জানাতে চায়।

জ্ঞানের জাহাজ হয়ে দুনিয়া উল্টানোর স্বপ্ন বিজ্ঞামনের নেই। ১ম বছর শেষে বিজ্ঞামনের ভালো লাগা এখানেই যে একদল মানুষ এই “ওভার কম্যুনিকেটেড” এবং “কোলাহলময়” সাইবারস্পেসে বিজ্ঞামন পড়ছেন, ফলো করছেন। যেহেতু লাভ-লোভ-রুটি-রুজির বিষয় নেই, বিজ্ঞামন আগামী বছর এই আনন্দটুকু নিয়মিত পেতে চায়। আগামী বছর আরও ২৫টি নতুন লেখা বিজ্ঞামনে আসবে – সেটাই এই মুহূর্তের পরিকল্পনা।

প্রিয় পাঠক, ধন্যবাদ জানুন, কৃতজ্ঞতা জানুন।

১৩ অক্টোবর ২০১৯।

No comments:

Post a Comment