মুকব্যাং – কোরিয়া থেকে কক্সবাজার




"হাই ফ্রেন্ডস। ওয়েলকাম টু মাই চ্যানেল। আজকে আপনাদের মধ্যে হাজির হয়েছি। আজকে আমরা ভাত খাবো। ও হচ্ছে  আমার ছোট বোন ময়না, আর আমি হচ্ছি মিজান। আজকে দেখি কী দিয়ে ভাত খাই –আজকে আমরা খাবো – এগুলা হচ্ছে তেলাপিয়া মাছ আর টমেটো রান্না করছে। আর এগুলা হচ্ছে বাধাকপি ভাজি। এগুলা হচ্ছে টমেটো ভর্তা। এগুলা হচ্ছে মরিচ পিঁয়াজ আর মাছ দিয়ে; মরিচ চুরা বলে আমাদের ভাষায়। আর এগুলা হচ্ছে ইলিশ মাছ। এগুলা হচ্ছে তেলাপিয়া মাছ। তাহলে আজকে আর দেরী না করে আমরা খাওয়া শুরু করি। প্রথমে বাধাকপি নিই..."


এই হচ্ছে – হাল আমলের বাংলাদেশে ভাইরাল হওয়া মিজান ময়নার খাবারের একটি ভিডিওর ১ম এক মিনিট। ভিডিওটির দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে তেরো মিনিট। খাবারের মাঝে মাঝে মিজান টুকটাক কথা বলে। তাদের মায়ের রান্নার প্রশংসা করে। তবে তাদের উল্লেখযোগ্য ডায়ালগ হলো – কুব ট্যাশ (খুব টেস্ট)। 




এই কুব ট্যাশ নিয়ে ট্রল হয়েছে প্রচুর। হয়েছে টপিক্যাল অ্যাড –


বিজ্ঞাপনে 'ট্যাশ'

অনলাইনে মিজান ময়না ও তাদের আরেক বোন বকেয়ার কয়েক ডজন ভিডিও আছে। অনলাইনে তৃপ্তি সহকারে দেশীয় খাবার, নাইলেটিকা মাছের মাথা-লালশাক-মুলা-আলু-মুরগীর ঠ্যাং-৬০টা বরই, খাচ্ছে। একেবারে সাবলীল। কোনো জড়তা নেই, মুখোশ নেই, শো অফ নেই। তারা তাদের আম্মার রান্নার প্রশংসা করছে, চটাশ চটাশ শব্দ করে খাচ্ছে। তারা তাদের কক্সবাজারের গ্রামের বাড়িতে, ঘাটে, মাঠে, ধান ক্ষেতে লাইভ স্ট্রিমিং করে। তাদের হালিশহরে আরেকটা বাড়ি আছে, ওটা বারবার বলে। ওদের কোনো ব্র্যান্ড স্পন্সরশীপের মোহ আছে বলে মনে হলো না, তবে ইউটিউব থেকে টাকা ইনকামের কথা তারা একাধিক ভিডিওর কমেন্টে উল্লেখ করেছে।  

সার্বিকভাবে অনলাইনে মিজান ময়না স্রেফ বিনোদন হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে।


কিন্তু, এই ডিজিটাল দুনিয়ায় – অনলাইনে লোক দেখিয়ে খাবার খাওয়ার ক্লাবে মিজান-ময়না একা নয়। গুগল বা ইউটিউবে Mukbang লিখে সার্চ দিলেই পাবেন আরও শত মিজান ময়নাকে।

অনলাইনে লাইভে এরকম ভুড়িভোজের অফিসিয়াল নাম – Mukbang। ২০০০-২০১০ সালের দিকে শব্দটির উৎপত্তি কোরিয়ান Meokneun (eating) এবং bangsong (broadcast) এই দুই শব্দ থেকে। বাংলায় বললে বলা যায় – অন্যদের দেখিয়ে দেখিয়ে খাওয়া।



মুকব্যাং-এর সূচনা কোরিয়াতে। বিশেষ করে ২০১৩-১৪ সালে ব্যাপক বিস্তার লাভ করে ছড়িয়ে গেছে অন্যান্য দেশে।


কোরিয়ায় কেন?
 
কোরিয়ার দ্রুত গতির ইন্টারনেট কানেকশন এবং নেটিজেনদের হাতে আধুনিকতম মোবাইল ডিভাইস; এই দুইয়ের সম্মিলনে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যাপক প্রচার প্রসার ঘটেছে। 

এশিয়া-আমেরিকার সাংস্কৃতিক অবস্থা নিয়ে গবেষনা করেন জেফ ইয়াং। জেফের মতে, কোরিয়ার তরুণ জনগোষ্ঠীর বিশাল এক অংশ বিয়ের প্রতি বিরক্ত। একারণে অবিবাহিত তরুণ প্রজন্মের মাঝে একরকম নিঃসঙ্গতা তৈরী হয়েছে। এই নিঃসঙ্গতা ও নির্জনতায় ভার্চুয়াল সঙ্গ এনেছে মুকব্যাং। নির্জন সন্ধ্যায় খাবারের বাটি হাতে আপাতঃ নিঃসঙ্গ মানুষটি লাইভ দেখছে, খাচ্ছে, মাঝে মাঝে নিজেও যোগ দিচ্ছে ভিডিও কলে। মুকব্যাং হয়ে উঠছে নিঃসঙ্গতার নিরাময়। এটাই নতুন ডিজিটাল কালচার।

মুকব্যাং যারা করেন, তাদেরকে মুকব্যাঙার বলা হয়, মুকব্যাং জকি বলা হয়, ব্রডকাস্ট জকিও বলা হয়।



অনলাইনে লাইভ ভিডিও ব্রডকাস্ট করার আগ্রহের পাশাপাশি প্রয়োজন ভালো মানের ভিডিও ক্যামেরা, ভালো মাইক্রোফোন, উজ্জ্বল আলো, টেবিল ভর্তি খাবার। শুধু খাওয়া নয়, খাওয়ার মাঝে গাল গপ্প চলে। কোন খাবারের কেমন শব্দ – মচমচে, কড়কড়ে, কুরকুরে হাড্ডি, মিষ্টির ইয়্যাম, স্যুপ মুখে চটাস চটাস কিংবা ঝালের উফ-আপ জাতীয় যাবতীয় সব শব্দ দর্শকদের কানে পৌঁছে যাচ্ছে। দর্শক দেখছে, শুনছে, কমেন্ট করছে।

ইউটিউবের জনপ্রিয় মুকব্যাঙার N.E Let's Eat এর সাবস্ক্রাইবার প্রায় আড়াই মিলিয়ন। ভদ্রমহিলা প্রায়ই তার দুই শিশুসহ লাইভ স্ট্রিমিং করেন। মাঝে মাঝে শিশুতোষ আলাপগুলোও বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। গতকালই এই চ্যানেলে আপলোড করা হয়েছে আফগানি খাবারের মুকব্যাং



ব্রডকাস্ট জকিরা লাইভ ভিডিওতে এসে দর্শকদের বেশি বেশি খেতে উৎসাহিত করে। ফলে, যাদের খাবারে রুচি নেই, আগ্রহ নেই – তারা অনেকে এসব ভিডিও দেখে খাবার খেতে আগ্রহ ফিরে পায়। স্রেফ মুখের কথা নয়; মার্কেট রিসার্চ জানাচ্ছে এই তথ্য। অন্যদিকে কারো কারো নাকি মুকব্যাং ভিডিও দেখে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও দমে যায়। 

এক রিপোর্টে দেখা গেছে – শারীরিক সমস্যার জন্য ডাক্তার যেসব খাবার খেতে নিষেধ করেছেন, সেসব রোগীরা ব্রডকাস্ট জকিদের ঐসব খাবার খেতে দেখে এক রকম ‘আনন্দ’ পান। অন্যের সুখেই সুখ - অনেকটা পরোক্ষ কনজাম্পশন। কেউ কেউ এই ব্যাপারটিকে কাউন্টার ইনট্যুইটিভ বলতে পারেন। আরেকটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। টিভিতে ট্রাভেল শোগুলোর কথা ভাবুন। বিশ্বের দর্শনীয় সব জায়গার যাওয়ার সামর্থ্য নেই, অথচ দিব্যি আনন্দ নিয়ে মন দিয়ে টিভি পর্দায় ট্রাভেল শো দেখছে একদল দর্শক। একই রকম উদাহরণ - ইউটিউবে অনেকে মাছ ধরার ভিডিও দেখেন।

এখানে বিশ্বাসযোগ্যতারও ব্যাপার আছে। 



শো-বিজ জগতে সেলিব্রিটিরা পোশাকে সজ্জায় উজ্জ্বল হয়ে মঞ্চে আসে। সেখানে কোনটি সত্য, কোনটি মিথ্যা জানার উপায় নেই। অন্যদিকে, মুকব্যাং হলো লাইভ পারফর্ম্যান্স। এক গাদা খাবার খাওয়ার দৃশ্যে কোনো মিথ্যে নেই, কাট-আনকাট নেই।
  

মুকব্যাং করে মাসে ১০ হাজার ডলারেরও বেশি আয় করছে কেউ কেউ।

আয়ের উৎস কী? দর্শকরা ভার্চুয়াল বেলুনের মাধ্যমে অর্থ দেয়; এই ভার্চুয়াল কারেন্সি আলাদা করে কিনতে হয়। তবে ব্রডকাস্ট জকিরা যা খায়, সেসব খাবারের ও মসলার ব্র্যান্ডগুলোও স্পন্সর করে। সেখান থেকেও টাকা আসে।

মুকব্যাং কেবল  খাবার খাওয়া নয়, খাওয়ার ভঙ্গিটাও গুরুত্বপূর্ণ। খেতে খেতে দর্শকের সাথে কম্যুনিকেট করাটা বড় বিষয়। কমেন্টে হয়তো কেউ জিজ্ঞেস করছে – ঝাল কেমন? তখন ক্যামেরার ফোকাস ক্লোজ করে খাবারকে কাছাকাছি দেখানো, কিংবা ঝালের মাত্রা কেমন সেটা বোঝাতে মুখভঙ্গি করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। মিজান ময়নার ভিডিওতেও দেখবেন খাবার চিবানোর এবং ঝালে ঝোলে অম্বলে চটাস চটাস শব্দের একটা ব্যাপার আছে। এমনকী তাদের ভিডিও’র টাইটেলেই আছে – Eating Show with Sound!!
মিজান ময়নার কোনো পরামর্শক আছে কিনা জানি না। তবে তারা মুকব্যাং ভিডিওর প্রধান উপকরণ – “শব্দ করে খাওয়ার” – ব্যাপারটিকে মিস করেনি।

খাবার খেতে খেতে নানান রকম গল্প গুজব করে দর্শক ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়। কেউ কেউ খাবারের মাঝে বিরতি দিয়ে হাল্কা নাচ গানও করে। এক হিসেব মতে, প্রতিটি লাইভ মুকব্যাং সেশন চলে তিন ঘন্টার মতো।

ডিনার-টাইমে শুধু কোরিয়াতেই প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ অনলাইনে মুকব্যাং দেখে। 

ব্রডকাস্ট জকিরা চ্যাটরুম ম্যানেজের জন্য ম্যানেজার নিয়োগ করে। এই ম্যানেজাররা মূলতঃ জকিদের টপ ফ্যান লিস্ট থেকে বাছাই করা হয়।

খাবার নিয়ে লাইভ প্রতিযোগিতাও চলে। এমন এক প্রতিযোগিতায় একজন এক নাগাড়ে ৯৭টি বার্গার খাওয়ার রেকর্ড করেছে।


মানুষ কেন মুকব্যাং দেখে?

সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় নিঃসঙ্গতা মানুষকে গিলে ফেলেছে। অফলাইন জগত ছেড়ে মানুষ অনলাইনের দ্বিতীয় জীবনকে মূল জীবন করে ফেলেছে। মুখোমুখি দেখা নেই, সাক্ষাত নেই, আড্ডা নেই, কোলাহল নেই; অথচ আঙুল চলছে কীপ্যাডে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের চ্যাটবক্স হয়ে উঠছে প্রধান সামাজিক যোগাযোগ। এই সাইবার স্পেসে গান হচ্ছে, আড্ডা হচ্ছে, ছবি শেয়ার হচ্ছে, লাইভ ট্রাভেল স্ট্রিমিং হচ্ছে; তাহলে খাওয়া দাওয়া কেন আড়ালে হবে? এই বোধ এবং প্রয়োজন থেকেই অনলাইনে খাওয়া দাওয়ার লাইভ জলসা বসেছে; মুকব্যাং হয়ে গেছে অনেকের জীবনের অনিবার্য অংশ। 


সমাজবিজ্ঞানীরা অন্য একটা থিয়রীও অবশ্য উল্লেখ করেন। কোরিয়ার প্রচলিত রীতিতে ডায়নিং অ্যাটিকেট খুব কড়াকড়ি। খাওয়ার সময় হৈ-হল্লা-কথা বলা যাবে না। কনুই টেবিলের উপরে রাখা যাবে না। অনেকটা শোকের নীরবতার মতো করে খাবার খেতে হয়। একুশ শতকের শিশু কিশোরদের কাছে এই রীতি-নীতি মানা বেশ কষ্টের। ফলে, মুকব্যাং একটা বিদ্রোহ বিপ্লবের মতো। নীরবতার নীতিকে থোড়াই কেয়ার করে অনলাইন মুকব্যাং-এ আনন্দ উল্লাস ও উদযাপনের মধ্য দিয়ে খাওয়া দাওয়া হবে; ব্যাপারটাই অন্যরকম! শেকল ভেঙ্গে স্বাধীনতার স্বাদ এনে দিয়েছে মুকব্যাং।

মুকব্যাং ভিডিও দেখার পেছনে নিঃসঙ্গতার প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে। এই রিপোর্ট বলছে – মুকব্যাং ভিডিও দেখার পেছনে ৭টি ফ্যাক্টর কাজ করে –

১) চোখ জুড়ায় – মন জুড়ায়। ব্রডকাস্ট জকি দেখতে কতোটা আকর্ষণীয়? শারীরিক গঠন, বাহ্যিক সৌন্দর্য্য এবং বাচনভঙ্গী দর্শকের আগ্রহ তৈরির মূল উপাদান।

২) উঁকিঝুকির প্রবণতা। অন্যের ব্যক্তিগত জীবন আড়াল থেকে দেখার ব্যাপারে মানুষের একটা সহজাত আগ্রহ কাজ করে। মুকব্যাং ভিডিওতে একজন তার বাসায় বসে লাইভ ব্রডকাস্ট করছে – সেটা আমি-দর্শক দেখতে পাচ্ছি, অথচ আমাকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না; এই ব্যাপারটার মধ্যে একটা নিষিদ্ধ আনন্দ আছে। এক কথায় পিপিং-টম-প্লেজার

৩) নতুনত্ব। ডিজিটাল জগতে দীর্ঘদিন ফুডপর্ন এবং কুকিং শো’র রাজত্ব ছিল। এই রাজত্বে হানা দিলো মুকব্যাং। কুকিং শোগুলো কেবল খাবার রান্না এবং শেষে এক চামচ মুখে দিয়ে ‘ইয়াম্মিইইই’ পর্যন্ত ছিল। এই বিরক্তি এবং এক ঘেঁয়েমির দেয়াল ভেঙে নতুনত্ব এনেছে মুকব্যাং।

৪) একাকীত্ব। আগেই যেমন বলেছি - মুকব্যাং হয়ে উঠছে নিঃসঙ্গতার নিরাময়।একা একা খেতে ভালো লাগছে না? অনলাইনে গিয়ে দেখি অন্য কে কে খাচ্ছে। কিংবা আমি নিজেই লাইভে চলে গেলাম; ব্যাপারটা এরকম।  

৫) স্বাস্থ্য সচেতনতা। মুকব্যাং কেবল ‘রিচ ফুড’ প্রমোট করে তা না। অনেক ব্রডকাস্ট জকি আছেন, যারা কোন স্বাস্থ্যকর খাবার কীভাবে রান্না করলে উপকার পাওয়া যাবে সেসব নিয়ে আলাপ করেন। এ বিষয়গুলো অনেক দর্শকের কাছে খুব আকর্ষণীয়।

৬) যৌথ সমাজ জীবন। এটা অনেকটা উপরের ৪ নম্বর পয়েন্টের পরিপূরক। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে নিঃসঙ্গতার মাঝেও মানুষ যুথবদ্ধতা খোঁজে। যেমনঃ ফেসবুক গ্রুপে যোগ দেয়, গ্রুপ চ্যাট কিংবা ওয়াচ পার্টি করে। একই ধারাবাহিকতায় দলবেঁধে মুকব্যাং দেখাটাও এই যৌথ সমাজ জীবনের প্রতিচ্ছবি।

৭) সামাজিক প্রভাব। মুকব্যাং ট্রেন্ড হচ্ছে, বিভিন্ন ফোরামে শেয়ার্ড হচ্ছে। বন্ধুবান্ধব পাড়া প্রতিবেশির প্রচারণা, প্ররোচনা, কিংবা পরামর্শেও অনেকে মুকব্যাং ভিডিও দেখে। 

উল্লেখ্য, গবেষণাটির ফলাফলে ‘একাকীত্ব’ ও ‘স্বাস্থ্যসচেতনতা’র উল্লেখযোগ্য প্রভাব (স্টাটিস্টিক্যালি সিগনিফিক্যান্ট ইনফ্লুয়েন্স) পাওয়া যায়নি। তবে, থিয়রেটিক্যাল এক্সপেক্টেশন বেশ পাকাপোক্ত।


এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, মুকব্যাং সাদামাটা খাওয়া দাওয়া নয়। একজন মানুষ এক প্লেট চিকেন ফ্রাই বা এক বাটি নুডুলস খেয়ে লাইভ থেকে সরে যাচ্ছেন, এই দৃশ্যে কেউ আগ্রহ পাবে না। মুকব্যাং হলো খাওয়া দাওয়ার এক্সট্রিম চর্চা। দশজনের খাবার একজন খাচ্ছে; এক বসায় এক গাদা খাবার খেয়ে উঠছে। টেবিলে থাকছে নানান বাহারের খাবার। হয়তো তীব্র ঝাল খাবার, এমন ঝাল যে জিহবা লাল হয়ে যাচ্ছে, চোখ-নাক থেকে পানি পড়ছে; এটাও আনন্দ! খাবারের সঙ্গে গল্প থাকছে, ঠাট্টা রসিকতা থাকছে, দর্শকদের সঙ্গে লাইভ ইন্ট্যার‍্যাকশন থাকছে; এটাই মুকব্যাং মন্ত্র! মিজান ময়নার কথাই ধরি - মিজান নিজেই ‘কুব ট্যাশ’ ট্রলিংকে স্মার্টলি হ্যান্ডেল করে বলছে – “আজকের ভিডিও অনেক ট্যাশ হবে। আপনারা অনেকেই ‘ট্যাশ হয়েছে’ কথাটা বলার জন্য বলছেন, তাই বলছি”। অথবা “বাজারের থেকে বাড়ির শাক অনেক মজা হয়, বাজারের শাক ভালো হয় না”

বিশ্বজুড়ে ব্রডকাস্ট জকিদের তুমুল জনপ্রিয়তা, লক্ষ লক্ষ ফ্যান ফলোয়ার। এরাই ডিজিটাল ‘ইনফ্লুয়েন্সার’। আর এই অবস্থার সুযোগ নিয়েছে ব্র্যান্ডগুলো। বিশেষ করে খাবারের ব্র্যান্ডগুলো স্পন্সর করছে ব্রডকাস্ট জকিকে। অর্থের বিনিময়ে লাইভ ভিডিওতে তারা বলছে – এই ব্র্যান্ডের নুডলসের সাথে এই ব্র্যান্ডের সস দিবেন, তাহলে স্বাদ হবে। এমনও দেখা গেছে যে, ব্রডকাস্ট জকির নখের নেইল পলিশ কোন ব্র্যান্ডের সেটাও দর্শকরা কমেন্টের মাধ্যমে জানতে চাইছে। ফলে, শুধু খাবার নয়, ব্রডকাস্ট জকির কসমেটিক্স ও পোশাক স্পন্সরের জন্যও ব্র্যান্ডগুলোর মাঝে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। ভিডিও-ব্লগার ও মুকব্যাংগার ডেভিড ডব্রিকের এক শো স্পন্সর করেছে পিজ্জা হাট।


মুকব্যাং নিয়ে তীব্র সমালোচনাও আছে।
চারপাশে যখন স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের প্রচারণা চলছে। খোদ ইউটিউবেই শত শত চ্যানেল আছে কোন খাবার খেয়ে কীভাবে সুস্থ থাকা যাবে; তার বিপরীতে মুকব্যাং অনেকের কাছে এক উৎপাত। শংকা আছে, একটা জেনারেশন মুকব্যাং ভিডিওর প্রভাবে অস্বাস্থ্যকর এবং অতিরিক্ত খাবার (ইটিং ডিসঅর্ডার) খেয়ে খুব অল্প বয়সেই নানান রোগে ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে।


ব্র্যান্ড স্পন্সরশীপের মোহ হয়তো মিজান-ময়নার নেই। কিন্তু, লোকাল ব্র্যান্ডগুলো কি মিজান ময়নাকে কাজে লাগাতে পারে না? এই  সুযোগ এখনো নেয়নি কেউ।  

ভাবুন তো একবার - চটাশ চটাশ শব্দ করে নাইলেটিকা মাছের মাথা-লালশাক-মুলা-আলু-মুরগীর ঠ্যাং খেতে খেতে মিজান বলছে – "আমার আম্মু ফ্রেশ সয়াবিন ছাড়া অন্য তেল ইউজ করে না। পাশ থেকে ময়না বলছে – লবণটাও ফ্রেশের। এরপর তারা ফ্রেশ ব্র্যান্ডের বোতল থেকে পানি ঢেলে গ্লাসে খাচ্ছে আর বলছে – এই পানিটা আমাদের নলকুপের। তবে – হালিশহরের বাসায় যাওয়ার সময় বাস জার্নিতে আমরা ফ্রেশ ছাড়া অন্য ব্র্যান্ডের পানি খাই না"। 

প্রোডাক্ট/ব্র্যান্ড প্লেসমেন্টের অভিনব এই স্পেসটির সুযোগ বাংলাদেশে কেউ নিক বা না নিক; ভিনদেশী ব্রডকাস্ট জকিদের মতো এক স্তুপ খাবার না খেলেও, মিজান-ময়নাই মুকব্যাঙ-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের পাইওনিয়ার। 

ন্যাচারাল ব্রডকাস্ট জকি!

No comments:

Post a Comment