"এক প্রতিযোগীর কাছে বিচারক র্যাম্প মডেল খালেদ সুজন জানতে চেয়েছেন, ‘এইচটুও (পানির রাসায়নিক সংকেত) কী?’ উত্তরে প্রতিযোগী বলেছেন, ধানমন্ডিতে এই নামে একটি রেস্টুরেন্ট আছে। প্রতিযোগিতা শেষ হতে না–হতেই ভাইরাল হয় এর ক্লিপ।"
"মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ নিয়ে এবারও সমালোচনা"
প্রথম আলো, ২ অক্টোবর ২০১৮
এরপর H2O নিয়ে বিজ্ঞাপনের স্রোত বইছে ফেসবুকের নিউজ ফীডে।
পানি, বিস্কুট, বার্গার, টেলিকম - সবাই রেটরেসে সামিল।
H2O নিয়ে বিজ্ঞাপনের স্রোত |
বাস্তবতা হচ্ছে - এই বিজ্ঞাপনগুলোর অ্যাপিল খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাবে। আমাদের
সোশ্যাল মিডিয়া এতো বেশি ঘটনাবহুল, এতো বেশি ব্রেকিং নিউজ আর ইভেন্টে
ভরপুর যে - ট্রেন্ডিং কোনো কিছু ২৪ ঘন্টার বেশি টিকছে না।
তবে,
ব্র্যান্ডগুলো প্রশংসা পেতে পারে এ জন্য যে, চলতি ঘটনাকে কেন্দ্র করে
বিজ্ঞাপন করার সাহস তারা করছেন। এর পেছনে শ্রম আছে কিছু মানুষের। বিজ্ঞাপনী
সংস্থায় কাজ করতো এক বন্ধু, টেলিটকের শুরুর দিকের বেশিরভাগ বিজ্ঞাপন তার
এক্সিকিউশনে, যার সাথে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা বলেছি মার্কেটিং৩৩৭ পড়ানোর সময়।
সে প্রায়ই ক্লায়েন্টের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করতো। কারণ, কোনো ফ্রেশ আইডিয়া
ক্লায়েন্টের কাছ থেকে গ্রীণ সিগন্যাল পেতে পেতে ফ্রেশনেস হারিয়ে ফেলতো।
এখন মনে হচ্ছে - দেশে এই চর্চা একটু হলেও বদলেছে। ঘটনা ঘটার ১২ থেকে ১৮
ঘন্টার মধ্যে বিজ্ঞাপন চলে আসছে ব্র্যান্ডের অফিসিয়াল পেইজ থেকে।
*
তবে H2O নতুন কিছু না।
এই কিছুদিন আগে তামিমের ভাঙা হাতে ব্যাট করা, আগের এক বিশ্বকাপে সুয়ারেজের
কামড়, কিংবা অনন্ত জলিলের তামাশা; এরকম ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে
বিজ্ঞাপন হয়েছে - প্রিন্ট মিডিয়ায়, বিলবোর্ডে...
এখন সোশ্যাল মিডিয়া
বিশেষ করে ফেসবুকের বুদবুদানিতে কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে। ভাইরাল হচ্ছে খুব
দ্রুত। কিন্তু, একটা মুশকিলও রয়ে যাচ্ছে...
মুশকিল হচ্ছে - সবাই ঝাপিয়ে পড়ছে।
পানি, টেলিকম, বার্গার, বিস্কুট সবাই যখন একই বিষয়ে খুব কুইক বিজ্ঞাপন বানাচ্ছে, তখন বিজ্ঞাপনের বক্তব্য অডিয়েন্সের ডিভাইস স্ক্রীণ থেকে চোখে গিয়ে, চোখ থেকে মাথায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
সেই পুরনো "ক্লাটার"।
হৈ চৈ কোলাহল। সবাই দেখছে, হাসছে, তালি দিচ্ছে। লাইক, ট্যাগ, শেয়ার দেয়ার পর মুহূর্তেই ভুলে যাচ্ছে।
ফলে, একটা বিজ্ঞাপন বার্তার উদ্দেশ্য কতোটা সফল হচ্ছে সেটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
*
আগেই বলেছি, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বা সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বিজ্ঞাপন নতুন কিছু না। বইয়ের ভাষায় একে "টপিক্যাল অ্যাডভার্টাইজিং" বলে।
অর্থ্যাৎ, চলমান কোনো টপিককে কেন্দ্র করে খুব দ্রুত বিজ্ঞাপন বানাতে হবে।
ইন্টারনেট আসার আগে একটা সুবিধা ছিল।
কোনো আলোচিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেই ব্র্যান্ড আগেভাগে বিজ্ঞাপন বানাতে
পারতো, তারাই কম্পিটিটিভ অ্যাডভান্টেজ পেতো। মানে, দৈনিক পত্রিকার পাতায়
টপিক্যাল অ্যাড ছাপিয়ে সবাইকে চমকে দিচ্ছে।
সকালে এক হাতে চা, আরেক
হাতে কাগুজে সংবাদপত্র নিয়ে পাঠক বিজ্ঞাপনের ক্রিয়েটিভিটিতে মুগ্ধ হচ্ছে;
অফিসে, বাসে, আড্ডায় বিজ্ঞাপনটি নিয়ে আলাপ করছে। এটাই ঐ ব্র্যান্ডের
সাফল্য।
এই সাফল্যকে কেন্দ্র করে অন্য কোনো ব্র্যান্ড একই রকম
বিজ্ঞাপন বানাবে, সেই সাহস পেতো না। কারণ, ঘটনার ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে কেউ
একজন বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে ফসল ঘরে তুলে নিয়েছে। ৭২ বা ৯৬ ঘন্টা পরে টপিকের
আবেদন আর নেই।
অথচ, এখন এই ডটকম যুগে - ফার্স্ট মুভার অ্যাডভান্টেজ
আর নেই। প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে ঘন্টায় ঘন্টায় বিজ্ঞাপন বানিয়ে মানুষের
কাছে পৌঁছে যাচ্ছে সবাই। ফলে, কে আগে আইডিয়া নিয়ে এলো, কে বেশি উইট দিলো;
সেসব নিয়ে ভাববার সময় কারো নেই। অডিয়েন্সও হাসি দিলো, তালি দিলো বা গালি
দিলো; কিন্তু, খুব সম্ভাবনা আছে বিজ্ঞাপনের ব্র্যান্ডের নামটাই ভুলে গেল!
*
মার্কেটিং প্র্যাকটিশনাররা, বিশেষ করে পশ্চিমা জগতের, ম্যাডিসন এভিনিউ'র
থিংক ট্যাঙ্করা এক কালে টপিক্যাল অ্যাডভার্টাইজিং নিয়ে খুব আশাবাদী ছিলেন।
পলিটিক্যাল কনফ্লিক্ট, সেলিব্রিটি স্ক্যান্ডাল, স্পোর্টস ইভেন্ট - এসব নিয়ে
এক কালে টপিক্যাল অ্যাড বানিয়ে ব্র্যান্ডগুলো মারমার কাটকাট সাফল্য
পেয়েছে।
থিয়রিটিক্যালি টপিক্যাল অ্যাডের কিছু সুবিধার কথা বলা হয়,
যার মধ্যে অন্যতম হলো কনজুম্যার ব্র্যান্ড কানেকশন। এমনকি ৭-৮ বছর আগেও বলা
হলো - ব্র্যান্ড যদি নিজেকে কনজুম্যারের জন্য প্রাসঙ্গিক থাকতে চায় - এমন
কিছু করতে হবে যাতে এই কানেকশনটা মজবুত করা হয়। ইমোশনাল বন্ধন তৈরি করতে
গিয়ে ব্র্যান্ডগুলো চোখ কান খোলা রেখেছে। ভোক্তারা কী পড়ছে, কী দেখছে, কী
ভাবছে সেসব ট্র্যাক করেছে। আর সময় বুঝে টপিক্যাল অ্যাড নিয়ে হাজির হয়েছে।
এই তালিকায় - পেপসি, ওরিও, বার্গার কিং, ওরাল বি; সবাই ছিল...।
কিন্তু, এখন দিন পাল্টাচ্ছে - সোশ্যাল মিডিয়া দিনদিন ওভার কম্যুনিকেটেড
সোসাইটি হয়ে যাচ্ছে। সবাই প্রদর্শনীতে নেমেছে। বিকিকিনি চলছে পণ্যের,
ভাবনার, সেবার। ফলে, টপিক্যাল অ্যাডের সেই আবেদন আর নেই। ফেসবুক পেজে
প্রচারের কোনো খরচ নেই, কিছু একটা করতে হবে বলে করা, কিংবা তাড়াহুড়ার কারণে
- বিজ্ঞাপনগুলো মানসম্পন্ন হচ্ছে না। H2O নিয়ে করা বিজ্ঞাপনগুলোর কতোটাই
বা অডিয়েন্সের মনে স্থায়ী জায়গা করে নিতে পারলো?
*
মুস্তাফিজের প্রশংসায় আমুল (২০১৫) |
ইন্ডিয়ার
আমুল ব্র্যান্ডের কথা উল্লেখ না করলে, এই আলোচনা অসমাপ্ত থেকে যাবে। আমুল
যেটা করছে, অনেক বছর ধরে, তারা কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সকে ধরছে - কিন্তু
ক্রিয়েটিভিটি, পান, উইট; এসবে ছাড় দিচ্ছে না। অনেক ভাবনা চিন্তা মেধা থাকে
তাদের বিজ্ঞাপনের পেছনে। ফলে, মানুষ একরকম বলতে গেলে আমুলের বিজ্ঞাপন দেখার
জন্য অপেক্ষা করে। আমুলের বিজ্ঞাপনগুলো মানুষের মনে মাথায় জায়গা করে নিতে
পারছে। অন্যেরা পারছে না তেমন।
*
টপিক্যাল অ্যাডের ভাষা, চিত্র, বক্তব্য হতে হবে সুক্ষ্ম; ভারে নয়, ধারে কাটবে - এমন।
স্থুল হাস্যরস, উইচ-হান্টিং, বুলিয়িং; এসব করে ইম্প্যাক্ট তৈরি করা যাবে না।
বড়শিতে উঠে আসা মাছ যতোই ফ্রেশ হোক না কেন, রান্নার কৌশল মসলাপাতির মিশ্রণ হতে হবে যথাযথ...
*
নোট - যা ঘটেছিল মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় (ভিডিও)।
No comments:
Post a Comment