গত বৃহস্পতিবার
ডোনাল্ড ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে বলেন – শরীর থেকে করোনা ভাইরাস দূর করতে জীবাণুনাশক
পণ্যকে শরীরে ইনজেক্ট করা যেতে পারে।
তার বক্তব্যের
সারমর্ম ছিল এরকম –
“ডিজইনফেক্ট
মাত্র এক মিনিটেই জীবাণুকে ধ্বংস করে দেয়। আমরা কিন্তু এইটাকে একরকম কাজে লাগাতে পারি।
যেমন ধরেন, এই জীবাণুনাশককে শরীরে ইনজেক্ট করে ভেতরটা একেবারে পরিস্কার করে ফেলা যায়।
জীবাণূগুলা যখন ফুসফুসে গিয়ে আঘাত করছে, তখন ভেবে দেখা যায় – জীবাণুনাশক দিয়ে ফুসফুস
পরিস্কার করা যায় কিনা। যদিও এটা ডাক্তাদের ব্যাপার – আমার কাছে ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং
মনে হচ্ছে।“
ট্রাম্পের বক্তব্যের
পরপরই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কড়া ভাষায় জনগণকে সতর্ক করেছে – এভাবে জীবাণূ দূর করা যাবে
না। এমনও শোনা গেছে – ট্রাম্প এটা প্র্যাঙ্ক করেছে। এসব নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঠাট্টা
তামাশার জোয়ার বয়েছে। তবে অনেকে ইগনোর করে গেছে এই বলে যে – ট্রাম্পের কথাকে গুরুত্ব
দেয়ার কী আছে?
তবে গুরুত্ব
দিয়েছে ক্লিনিং ব্র্যান্ডগুলো –
লাইজল ও ডেটল
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রেকিট বেনকাইজার খুব দ্রুত তাদের ওয়েব সাইটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে
ভোক্তাদের সতর্ক করেছে – জীবাণূনাশক পণ্য যেনো কেউ কোনোভাবেই শরীরে ইনজেক্ট না করে।
করলে এর ফলাফল ভয়ানক হতে পারে।
আমেরিকান ক্লিনিং
ইনস্টিটিউটও এক বার্তায় জানিয়েছে – জীবাণুনাশক পণ্য কেবল বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য। কোনোভাবেই
শরীরের ভেতরে অ্যাপ্লাই করা যাবে না।
ক্লোরক্স কোম্পানিও
জানিয়েছে – ব্লিচিং পাউডার এবং এ জাতীয় দ্রব্য কোনোভাবেই মুখ দিয়ে বা ইনজেকশনের মাধ্যমে
শরীরে প্রয়োগ করা যাবে না।
ট্রাম্পের উটকো
মন্তব্য এবং ব্র্যান্ডগুলোর এই যুগপৎ সতর্কবার্তা কিছু ভাবনার জন্ম দেয় –
১) ডোনাল্ড
ট্রাম্পের কথা শুনে এক বা একাধিক ভোক্তা ডেটল-লাইজল জাতীয় জিনিস শরীরে ইঞ্জেক্ট করতে
পারে, বা গিলে ফেলতে পারে। তাই ভোক্তাদের সতর্ক করার উদ্যোগ ব্র্যান্ডগুলো নিয়েছে।
২) কিছুদিন
আগে বাংলাদেশের প্রবীণ নেতা জয়নাল হাজারীর একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি বলেন, যেহেতু লাং বা ফুসফুসের ওপর করোনা ভাইরাস গিয়ে
জমা
হয়,
সে
কারণে
ফুসফুস
কেটে
বাইরে
এনে
ডেটল
পানি,
হ্যান্ড
স্যানিটাইজার,
অ্যালকোহল,
সাবান
পানি
দিয়ে
ধুয়ে
ফেললেই
কিন্তু
করোনা ভাইরাস মরে
যাবে।
তিনি
বিষয়টি
চিকিৎসকদের
ভেবে
দেখতে
বলেছেন।
অনলাইনে এই ভিডিও ক্লিপ নিয়ে বেশ হাসি ঠাট্টা তৈরি হয়েছিল।
৩) ট্রাম্প এবং হাজারীর বক্তব্যে ব্যাপক মিল থাকলেও বাংলাদেশের ব্র্যান্ডগুলো আমেরিকার
মতো করে কোনো সতর্ককরণ বিজ্ঞপ্তি দেয়নি। হাজারীর বক্তব্যের পক্ষে কোনো জনমত দেখা যায়নি।
কোনো দুর্ঘটনাও ঘটেনি।
৪)
তার মানে কি ব্যাপারটা এমন যে বাংলাদেশের ভোক্তারা আমেরিকার ভোক্তাদের তুলনায় বেশি
সচেতন?
৫)
একদিনে করোনার কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা আসেছে, এর ওপরে ডোনাল্ডের উলটাপালটা
কথার জন্য ব্র্যান্ডগুলোকেই সতর্কবার্তা নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হতে হচ্ছে।
বইয়ের
ভাষায় আমরা মেসেজ সোর্স, সোর্স ক্রেডিবিলিটি, কনজ্যুমার নলেজ জাতীয় যে ব্যাপারগুলো
নিয়ে আলাপ করি, পড়ি; সেসব ব্যাপারে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডগুলো কি তুলনামূলকভাবে স্বস্তিতে
আছে?
No comments:
Post a Comment