অরেঞ্জ জুস ব্র্যান্ড - ট্রপিকানা ।
জন্ম ১৯৪৭ সালে। ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ার পরেই, ১৯৯৮ সালে, এর মালিকানা কিনে নেয়
পেপসিকো। ট্রপিকানার মূল বাজার ছিল আমেরিকা ও কানাডা।
২০০৯ সালে জুসের প্যাকেজিং পালটে বড়সড় বিপদে পড়েছিল
ট্রপিকানা। আঘাতটা ছিল সরাসরি বেচাবিক্রির ওপর। দুই মাসে বিক্রি পরিমাণ ২০% কমে
গিয়েছিল।
শুরুতেই দেখি – কী পরিবর্তন এসেছিল প্যাকেজিংয়ে -
এক নজরে মনে হতে পারে – খারাপ কী? ভালোই লাগছে নতুন
মোড়ক।
নতুন মোড়কে আধুনিকতার ছাপ ছিল। বিশেষ করে পুরনো মোড়কে
একটা ‘সেকেলে’ ভাব ছিল। ট্রপিকানা ব্র্যান্ডের থিংকট্যাঙ্করাও এমনটি বলছিলেন।
প্রযুক্তিগত (গ্রাফিক্স) উন্নয়ন এবং সময়ের সাথে তাল
মেলাতে লোগো (এবং যাবতীয় ব্র্যান্ড এলিমেন্ট) কিংবা প্যাকেজিং পালটানো খুব আহামারী
কোনো ব্যাপার নয়। অ্যাপেল, পেপসি, ক্যাননসহ অনেক ব্র্যান্ড কয়েক দফায় লোগো
পাল্টেছে।
তাহলে ট্রপিকানার সমস্যা কোথায় ছিল? ভোক্তারা কেন নতুন
প্যাকেজিং মেনে নিতে পারলো না? জুসের স্বাদ নিয়েও কেন প্রশ্ন উঠলো?
দেখা যাক – নতুন মোড়কে কী কী পরিবর্তন এসেছিল
১) কমলা এবং স্ট্র’র ছবির বদলে গ্লাস ভর্তি জুস এসেছে
২) বড়সড় করে লেখা ‘নো পাল্প’ উধাও হয়ে গেছে
৩) উধাও হয়েছে – প্রিমিয়াম শব্দটি। পিওর প্রিমিয়ামের
বদলে লেখা হয়েছে ১০০% অরেঞ্জ পিওর অ্যান্ড ন্যাচারাল
৪) জুস প্যাকের ট্র্যাডিশনাল গোলাকার ক্যাপের
পরিবর্তে কমলার শেইপের ঢাকনা যুক্ত হয়েছে।
৫) পরিবর্তন এসেছে লোগোর ফন্ট – টাইপোগ্রাফিতেও
৬) প্যাকের গায়ে লোগো হরাইজন্টালের বদলে ভার্টিকাল
পজিশনে গেছে
৭) নতুন মোড়কে ‘স্কুইজ’ শব্দের দিকে জোর দেয়া হয়েছে
৮) সার্বিকভাবে রঙের মাত্রায়ও পরিবর্তন এসেছে
নতুন মোড়কে বাজারে আসা ট্রপিকানার বিজ্ঞাপনে ‘স্কুইজ’-এর
প্রভাব ছিল ব্যাপক। ক্রিয়েটিভ টীমের বক্তব্য ছিল ‘স্কুইজ, ইট’স ন্যাচারাল’ বলার
মাধ্যমে পণ্যের ‘ফাংশনাল বেনিফিটের’ দিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
এই জায়গায় ট্রপিকানা যে বিষয়টি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে তা
হলো ট্রপিকানা ব্র্যান্ড ও এর ভোক্তার মাঝে ফাংশনাল বেনিফিট ছাড়িয়ে এক রকম ইমোশনাল
সম্পর্ক ছিল। আবেগের এই জায়গা থেকে নতুন মোড়কে ট্রপিকানা দেখে ভোক্তারা বিষ্মিত
হয়েছে।
তাদের অনেক প্রশ্ন – এতো দিনের চেনা জানা ট্রপিকানা
কোথায় গেল?
ট্রপিকানার আইকনিক কমলা-স্ট্র কোথায় গেল?
নতুন ডিজানের লোগোর এই টপিকানা কি আসল ট্রপিকানা?
প্যাকেজের শরীর থেকে কমলা উধাও হয়ে গেল কেন?
নতুন প্যাকেজে গ্লাস ভর্তি যে জুস দেখা যাচ্ছে সেটা
কি পাল্পবিহীন জুস?
নো পাল্প কিংবা পিওর প্রিমিয়াম নেই কেন?
সার্বিকভাবে ভোক্তাদের মনে ট্রপিকানা জুসের যে
শক্তপোক্ত প্রতিচ্ছবি ছিল, তার কোনো কিছুই মিলছিলো না নতুন মোড়কে।
এমন কী অনেক ক্রেতা বাজারে গিয়ে ট্রপিকানা খুঁজে না
পেয়ে অন্য ব্র্যান্ড কিনে বাড়ি ফিরেছে। নতুন মোড়কের ট্রপিকানাকে তারা অন্য কোনো
ব্র্যান্ড ভেবে এড়িয়ে গেছে।
বছরের পর বছর ধরে আড়াআড়ি লাইনের ট্রপিকানা হঠাৎ লম্বালম্বি
হয়ে গেছে – সেটাও চোখ এড়ানোর বড় কারণ।
ব্র্যান্ডের সঙ্গে ভোক্তার যে ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট
তৈরি হয়েছিল, সেই সম্পর্কে বড়সড় আঘাত হানলো নতুন মোড়কের ট্রপিকানা। ফলাফল – দুই মাসের
মধ্যে ২০% বিক্রি কমে গেল। লাভের লাভ কিছুই হলো না। নতুন মোড়কের জন্য প্রচারিত
ক্যাম্পেইনের খরচ, ৩৫ মিলিয়ন ডলার, জলে গেল।
ব্র্যান্ড এলিমেন্ট ইট-পাথরের গাঁথুনিতে তৈরি কোনো জড়
বস্তু নয়।
সময়ের স্রোতে লোগো, সিম্বল, কালার কম্বিনেশন পালটানো
যেতেই পারে কিংবা পাল্টাতে হয়।
ট্রপিকানা ভুল যেটা করেছে তা হলো, এক দফাতেই তারা
একাধিক ব্র্যান্ড এলিমেন্ট পালটে ফেলেছে।
এ প্রসঙ্গে ক্যাম্পবেল স্যুপ এবং পেপসির লোগোর কথা
স্মরণ করা যেতে পারে।
যথেষ্ঠ সময় নিয়ে ধাপে ধাপে প্যাকেজিং-এ পরিবর্তন
এনেছে। এ পরিবর্তন ভোক্তা সমাজে অসহনশীল বলে মনে হয়নি।
তাত্ত্বিকভাবে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভুল
করেছিল ট্রপিকানা -
১) ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস
ট্রপিকানা জুসের যে আইকনিক ইমেজ, লোগোর ধরণ, শেইপ
কালার; সব বদলে গেছে এক দফায়। ফলে, ভোক্তার মনোজগতে ট্রপিকানার যে ছবি-প্রতিচ্ছবি
কিনা ছায়া-প্রতিচ্ছায়া; তার কিছুই পাওয়া যাচ্ছিল না নতুন মোড়কে। আরও বড় সমস্যা –
বছরের পর বছর ধরে বোতলে উপরিভাগে পাশাপাশি ট্রপিকানা পড়ে অভ্যস্ত ছিল ভোক্তারা।
নতুন মোড়কে নামের অবস্থানটাই পালটে গেল। ফলে, একটা জানাশোনা চিরচেনা ব্র্যান্ড হঠাৎ
করেই অচেনা হয়ে গেল।
২) পজিশনিং
আগের ট্রপিকানা মোড়কে তরতাজা কমলার ছবি ছিল। এ ছবি
ব্র্যান্ডটিকে হাই কোয়ালিটি জুসের ইমেজ দিয়েছিল। নতুন মোড়কের গ্লাসভর্তি জুসে
ভোক্তারা কোনো ‘প্রিমিয়াম’ পজিশনিং খুঁজে পায়নি। বরং গ্লাসভর্তি জুসের ছবি
ট্রপিকানাকে বাজারের অন্য ডজন ডজন নিম্নমানের জুসের কাতারে নিয়ে গেছে।
৩) ভ্যালু প্রপোজিশন
আগে মোড়কের গায়ে ‘প্রিমিয়াম’ শব্দটি ছিল। ‘নো পাল্প’
ছিল। এখন হয়ে গেছে পিওর ও ন্যাচারাল। এতোদিন ধরে যে পাল্পহীন-পিওর-প্রিমিয়াম জুসে
জনগণ চুমুক দিয়েছে সেই জুস থেকে ‘নো পাল্প’ বিলীন হয়ে গেছে। ছবি দেখেই মনে হচ্ছে –
হয়তো আর্টিফিশিয়াল কেমিক্যাল মেশানো নতুন ট্রপিকানা বাজারে এসেছে নতুন জামা গায়ে...
অবস্থা বেগতিক দেখে খুব দ্রুত পুরনো
মোড়কে ফিরতে বাধ্য হয়েছিল ট্রপিকানা।
গত ১০ বছরে, ২০০৯-২০১৯ সময়ে, ট্রপিকানা আরো কয়েক দফায় প্যাকেজিং লেবেলিং পরিবর্তন করেছে। সতর্ক, সুক্ষ্ম এবং সুপরিকল্পিত সে পরিবর্তন নিয়ে বিস্তারিত থাকবে আগামীর কোনো লেখায়।
*
**
***
প্রাসঙ্গিক সুত্র -
https://www.thebrandingjournal.com/2015/05/what-to-learn-from-tropicanas-packaging-redesign-failure/
https://jamandco.com.au/would-tropicanas-2009-packaging-redesign-failure-still-be-seen-as-a-failure-in-todays-market/
https://www.astuteo.com/articles/tropicana-redesign/
https://www.youtube.com/watch?v=WJ4yF4F74vc
https://www.youtube.com/watch?v=Ny3kKNf1faU